কুড়িগ্রামে চার শতাধিক চরে বসেছে কাশফুলের মেলা

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী সময়টা চলছে শরৎকাল। এ মৌসুম এলেই চরাঞ্চলখ্যাত জেলা কুড়িগ্রামের চারদিকে বসে সাদা মেঘের ভেলার মতো কাশফুলের মেলা। কুড়িগ্রামে রয়েছে ছোট-বড় মিলে ১৬টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীর তীরে মাঠজুড়ে শুধু সাদা কাশফুলের সমারোহ। নদ-নদীর অববাহিকায় চার শতাধিক চরাঞ্চলে জেগে ওঠা বালুমাটিতে বিশাল পরিসরে কাশবন হয়ে উঠেছে। এ জেলায় কোথাও তেমন বিনোদন স্পট না থাকায় বিনোদনপ্রেমী তরুণ-তরুণীরা ছুটছেন এসব কাশবনের দিকে। কাশগাছের চূড়ায় সাদা কাশফুলে যখন ভরে ওঠে, তখন প্রকৃতি যেন হেসে ওঠে চারদিকে। তাই একটুকরো প্রশান্তি নিতে ছুটে যায় মানুষ। এ সময় মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে তারা মনোরোম এসব দৃশ্য। আর সিনেমা-পাগল দর্শকদের তো কাশফুল চেনার কথা আরও বেশি। যারা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস এবং বিশ্ববিশ্রুত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি‘পথের পাঁচালী’দেখেছেন,তারা জানেন কাশফুলের সৌন্দর্য সম্পর্কে। কলকাতার বর্ধমান শহর থেকে অনতিদূরে পালসিট স্টেশনের কাছে ছিল সেই কাশবন। সত্যজিৎ রায় দিনের পর দিন কাশবনে এসেছেন দৃশ্য ধারণের জন্য। সেখানেই‘পথের পাঁচালী’র প্রথম শুটিং করে চলচ্চিত্রের রূপ দিয়েছিলেন তিনি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার অববাহিকায়,সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায়,উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা গেছে সাদা মেঘের ভেলায় কাশফুলের মেলা। এ চিত্র এখন কুড়িগ্রামের শত শত চরাঞ্চলের। এমন প্রকৃতি ও সৌন্দর্যে যে কারও হারিয়ে যেতে মন চাইবে। কাশবন শুধু চরাঞ্চলের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি,এসব কাশফুল বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরাঞ্চলবাসী। স্থানীয়রা জানান,প্রতিবছর বন্যা-পরবর্তী সময়ে নদ-নদীর অববাহিকায় বালুমাটি জমে। সেখানেই জন্ম নেয় কাশফুল। কোনো প্রকার ব্যয় ছাড়াই কাশফুল বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন চরাঞ্চলের মানুষ। 
এ ছাড়া কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে বলে জানা যায়। যেমন পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এ ছাড়া শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *